বাংলাদেশে গুম, গোপনে বন্দি রাখা ও নির্যাতনের অভিযোগে ২৮ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এ ঘটনাকে ন্যায়বিচারের পথে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে মনে করছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ উচ্চপদস্থ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। বহু প্রতীক্ষার পরে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হলো, যদিও দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা এখনও ঘটে।
এইচআরডব্লিউ মনে করে, সঠিক বিচার নিশ্চিত করা, মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ এবং সুশাসনের বিষয়ে আরও কাজের প্রয়োজন আছে। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ নানা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে সরকারের প্রতি সমালোচনা, বাকস্বাধীনতা ও তদন্তে বাধা ছিল। ২০২৪ সালের আগস্টে টানা তিন সপ্তাহের আন্দোলনে প্রায় ১,৪০০ জন প্রাণ হারায়, আর এই আন্দোলনের জেরে হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়; বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ ছেড়ে যান। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ‘গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশন’ গঠন ও প্রায় ১,৮৫০টি অভিযোগ জমা পড়ে।
তদন্তে দেখা যায়, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন তিন শতাধিক ব্যক্তি। ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ তথ্যচিত্রে এসব ঘটনার ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে। ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ ঘোষণার সময় অনেক ভুক্তভোগীও আদালতে উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ২০১৬ সালে নিখোঁজ ও আট বছর বন্দি থেকে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত মীর আহমেদ বিন কাসেম অন্যতম। মানবাধিকারকর্মী মীনাক্ষী গাঙ্গুলির মতে, ন্যায়বিচারের পথ দীর্ঘ হলেও বাংলাদেশে এই পদক্ষেপ একটি আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি।
সর্বশেষ মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এইচআরডব্লিউ মন্তব্য করেছে, "বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্তদের বিচার হবে, তবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত ও মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত উদ্বেগ এখনো রয়ে গেছে।"