বাংলাদেশ সরকার চীনের সঙ্গে সরাসরি ক্রয় বা জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) চুক্তির মাধ্যমে জে-১০ সিই যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫–২৬ ও ২০২৬–২৭ অর্থবছরে এই ক্রয় বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত নথিপত্র অনুযায়ী, বিমানের মূল্য ২০৩৫–৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে পরিশোধ করতে হবে।
জে-১০ সিই হচ্ছে চীনা বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত জে-১০সি মডেলের রপ্তানি সংস্করণ। এই ফাইটার জেটকে ৪.৫ প্রজন্মের মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২০২৩ সালে পাকিস্তান এই মডেল ব্যবহার করে ভারতের রাফায়েল যুদ্ধবিমানের মোকাবিলা করার দাবি জানিয়েছিল, যা পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী—
প্রতিটি জে-১০ সিই যুদ্ধবিমানের আনুমানিক দাম ৬ কোটি ডলার
মোট ২০টি বিমানের জন্য ব্যয় ১২০ কোটি ডলার (প্রায় ১৪,৭৬০ কোটি টাকা)
প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি, পরিবহন, বীমা, ভ্যাটসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় হবে আরও ১০০ কোটি ডলার
সব মিলিয়ে মোট ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ২২০ কোটি ডলার বা ২৭,০৬০ কোটি টাকা।
চুক্তি যাচাই ও দরকষাকষির জন্য বিমানবাহিনীর প্রধানকে সভাপতি করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এই কমিটি জিটুজি পদ্ধতিতে ক্রয় প্রক্রিয়া উপযুক্ত হবে কি না, খসড়া চুক্তিপত্র, প্রশিক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা—সব কিছু যাচাই-বাছাই করবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিপিএসএস)-এর প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল এ এন এম মনিরুজ্জামান (অব.) বলেন—
“বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর আধুনিক যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন অনেক আগে থেকেই অনুভূত হচ্ছিল। তবে এখনো চীনের সঙ্গে চুক্তিটি প্রাথমিক আলোচনার পর্যায়ে আছে। আমাদের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র–চীন সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রভাব মাথায় রেখে।”
চীনের বাইই অ্যারোবেটিক টিম ২০০৯ সালে জে-১০ মডেল ব্যবহার শুরু করে এবং ২০২৩ সালে তা আপগ্রেড করে জে-১০সি সংস্করণে। এই ফাইটার জেট এখন চীনের অন্যতম ফ্ল্যাগশিপ যুদ্ধবিমান হিসেবে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে নিয়মিত প্রদর্শিত হচ্ছে।
ওয়ারপাওয়ারবাংলাদেশ ডটকম অনুযায়ী, বর্তমানে বিমান বাহিনীর মোট এয়ারক্রাফট ২১২টি, যার মধ্যে ৪৪টি ফাইটার জেট।
৩৬টি চীনা তৈরি এফ-৭
৮টি রাশিয়ান মিগ-২৯বি
প্রশিক্ষণ ও লাইট অ্যাটাক মিশনে ব্যবহৃত ইয়াক-১৩০ ও কে-৮ বিমান
পরিবহন ও গানশিপ মিশনে এমআই-১৭ ও সি-১৩০জে ব্যবহৃত হচ্ছে
চীনা জে-১০ সিই কেনা হলে এটি হবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক প্রতিরক্ষা ক্রয়চুক্তি।
এটি শুধু প্রতিরক্ষা শক্তি নয়, বরং আঞ্চলিক সামরিক ভারসাম্যে বাংলাদেশের অবস্থানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।