স্টাফ রিপোর্টার, বাঘা :
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। সেই সাথে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। এই ভাঙ্গনের ফলে ফসলী জমি -সহ বেশ কিছু মানুষের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে দেখা গিয়েছে। তবে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি কিছু মানুষের কবরস্থান ।
সাত বছর আগে চকরাজাপুর চরের মৃত শেখ রজব আলী মুন্সীর স্ত্রী করিমুন্নেছা ও ছেলে আবদুল খালেকের মৃত্যু হয়। ১০ বছর আগে ছেলে সুমনকে হারিয়েছেন মা জহুরা বেগম। ১৩ বছর আগে বাবা-মাকে হারিয়েছেন ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেন শিকদার। ১৫ বছর আগে বাবা-মাকে হারিয়েছেন লক্ষী পাগলি। তাদের ভিটে মাটি-সহ অতি আদরের বাবা-মা এবং সন্তানকে দাফন করা কবর কেড়ে নিয়েছে রাক্ষুসে পদ্মা। সেই সাথে ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে অসংখ্য ফসলী জমি। ইতোমধ্যে অনেকে তাদের ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া শুরু করেছেন।
সোমবার বিকেলে বাঘা উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের দিয়ারকাদিরপুর চরের হতভাগা আবদুস সালামের স্ত্রী জহুরা বেগম কে তার ছেলে সুমনের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ১০ বছর আগে মাঠে পাউরুটিতে বিষ মাখিয়ে পাখি মারছিল চরের কিছু লোকজন। এই বিষ মাখানো পাউরুটি খেয়ে ছেলে সমুন মারা যায়। ওই সময় ভাঙনের পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে তাকে দাফন করা হয়। ১০ বছরের মাথায় সেই কবর পদ্মা গ্রাস করছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আলম বরেলন, শুধু কবর নয়, এই চরে অনেক মানুষ নদী ভাঙ্গনের কারনে ইতোমধ্যে গৃহহারা হয়েছেন। আবার অনেকেই ঘরবাড়ি ভেঙ্গে অন্য এলাকায় গিয়ে নতুন করে ঘর বানাচ্ছেন। ইতোমধ্যে সরিয়ে নেয়া হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। তিনি এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ জেলা প্রশাসক মহোদয় এর সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, কবরতো নিয়ে যাচ্ছে রাক্ষুসে পদ্মা। পাশাপাশি ফসলি জমি- গাছপালা, বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছে কিছু মানুষ। তার বিদ্যালয়টি পদ্মা গ্রাস করে নিয়েছে। ফলে বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়টি বিগত বছর গুলোতেও ভাঙ্গনের কারণে এ পর্যন্ত তিনবার স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মি আক্তার বলেন, নদীতে পানি বাড়ার কারনে চরাঞ্চলে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গতকাল আমার লোকজন কবলিত এলাকা তদন্ত করে এসছে। আমি ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থদের আর্থিক সহায়তা প্রদান সহ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় কে লিখিত ভাবে অবগত করেছি।