নির্বাচন ও ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯১ সালে। দীর্ঘ ৩৩ বছরের অপেক্ষার পর অবশেষে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৭৪৩ জন শিক্ষার্থী, এর মধ্যে প্রায় ৬৮ শতাংশ ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় ২১টি হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়, যেখানে ২২৪টি বুথে শিক্ষার্থীরা ভোট দেন।
নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয় প্রায় ১ হাজার ২০০ পুলিশ সদস্য। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছিল সিসি ক্যামেরা, যার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন সরাসরি ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করে।
প্রধান ফলাফল
নির্বাচনে মোট ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৭৭ জন প্রার্থী। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার পর ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত ফলাফল নিচে দেওয়া হলো:
সভাপতি (ভিপি): আব্দুর রশিদ জিতু (স্বতন্ত্র)
সাধারণ সম্পাদক (জিএস): মাজহারুল ইসলাম (শিবির-সমর্থিত)
সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস): ফেরদৌস আল হাসান
সহ-সাধারণ সম্পাদক (ছাত্রী): আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা
শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক: আবু উবায়দা উসামা
পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সম্পাদক: সাফায়েত মীর
সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক: জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি
সাংস্কৃতিক সম্পাদক: শেখ জিসান আহমেদ
সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক: রায়হান উদ্দিন
নাট্য সম্পাদক: রুহুল ইসলাম
ক্রীড়া সম্পাদক: মাহমুদুল হাসান কিরণ
সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (ছাত্র): মাহাদী হাসান
সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (ছাত্রী): ফারহানা লুবনা
আইটি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক: রাশেদুল ইমন লিখন
সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক: আহসান লাবিব
সহ-সমাজসেবা সম্পাদক (ছাত্র): তৌহিদ ইসলাম
সহ-সমাজসেবা সম্পাদক (ছাত্রী): নিগার সুলতানা
স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা সম্পাদক: হুসনী মোবারক
পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক: তানভীর রহমান
কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন—
ফাবলিহা জাহান, নাবিলা বিনতে হারুন, নুসরাত জাহান ইমা, হাফেজ তরিকুল ইসলাম, আবু তালহা ও মোহাম্মদ আলী চিশতী।
নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা ও অভিযোগ
ভোটগ্রহণের আগে ও পরে নানা অভিযোগ ওঠে। কিছু প্রার্থী অভিযোগ করেন, অনেক হলে এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে, যাদের ভোটার তালিকায় থাকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। আবার কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন যে প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক ভূমিকার সুযোগ নিতে চাইছিল একটি অংশ।
তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন:
“এই নির্বাচনকে আমরা একটি মডেল নির্বাচন করতে পেরেছি। শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভোট দিয়েছেন। কোনো অনিয়ম হয়নি, ফলাফল শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতিফলন।”
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনটি অতিবাহিত করেন।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল চৌধুরী বলেন,
“আমরা চাই এই ধারা অব্যাহত থাকুক। জাকসু যেন শিক্ষার্থীদের প্রকৃত অধিকার রক্ষার মঞ্চে পরিণত হয়।”
আরেক শিক্ষার্থী ইরফাত আমিন বলেন,
“আমরা কখনো এভাবে উৎসবমুখর ভোট দেখিনি। ৩৩ বছরের অপেক্ষা শেষে এই নির্বাচন আমাদের গণতন্ত্র চর্চার নতুন অধ্যায়।”
৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন শুধু একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার প্রতিফলন। ভোটার উপস্থিতি, উৎসবমুখর পরিবেশ এবং নতুন নেতৃত্বের উদ্ভব—সব মিলিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।